
নিজেস্ব প্রতিনিধি_আব্দুল কাইয়ুমঃ
তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক দিতে চাইলে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ পৌরসভার মেয়র/ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে।চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হয়ে থাকে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে। আপনার চিঠি থেকে মনে হচ্ছে, নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মীমাংসার কোনো উদ্যোগ হয়নি এবং ইতিমধ্যে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। কাজেই আপনার স্ত্রীর দেওয়া তালাক কার্যকর বলে গণ্য করা হবে।
অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় কিংবা আগে তালাকের নোটিশ পাঠান, তাহলে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এই ধারণা সঠিক না। স্ত্রী তালাক দিলেও তাঁর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে,আপনার শেষ প্রশ্নে আপনি জানতে চেয়েছেন, তাঁকে দেনমোহর বাবদ কত টাকা দিতে হবে বা তিনি আপনার কাছ থেকে ভরণপোষণ বাবদ কত টাকা পাবেন। কাবিননামা অনুযায়ী তাঁর যা প্রাপ্য, সেই টাকাই তিনি পাবেন। কাবিননামায় দেনমোহরের পরিমাণ যদি দুই লাখ টাকা হয় এবং উশুলের টাকার কথা উল্লেখ থাকে। সে ক্ষেত্রে তিনি দেনমোহর সহ সম্পূর্ন টাকা পাবেন। এ ছাড়া যদি স্ত্রী ও অপ্রাপ্তবয়স্কোক ছেলে মেয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে ইদ্দতকালীন (তালাকের নোটিশ প্রদান থেকে তালাক কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সময়) ভরণপোষণও প্রদান করতে হবে।
যদি আপনার মনে হয়, কাবিননামা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে জাল কাবিননামা তৈরির জন্য প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা করতে পারবেন। যদি কেউ মিথ্যা ও অবৈধ অর্থ লাভের আশায় জাল নিকাহনামা তৈরি করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে প্যানাল কোডের ৪৬৪/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/৩৪ ধারায় মামলা করা যাবে। দণ্ডবিধির ৪৬৫ ধারায় জালিয়াতির শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। বাংলাদেশ আইন দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারা অনুযায়ী আদালতে নথি বা সরকারি রেজিস্টার ইত্যাদিতে জালিয়াতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বিচারালয়ের নথিপত্র বা মামলার বিবরণী-সংক্রান্ত কোনো দলিল বা জন্মনামকরণ, বিয়ে বা শবসংক্রান্ত রেজিস্টার হিসেবে গণ্য বা সরকারি সার্টিফিকেট জাল করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ অপরাধ জামিনযোগ্য নয়। ৪৬৭ ধারার অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ জালিয়াতিতে সহায়তার কারণেও হতে পারে।