নিজস্ব প্রতিনিধি_মোঃ মাহফুজ মিয়াঃ
নবীগঞ্জে ভয়াবহ সংঘর্ষ, অগ্নিকাণ্ড, লুটপাট এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪ থেকে ৫ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে নবীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক(এসআই) রিপন চন্দ্র দাস বাদী
হয়ে বিশেষ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো.কামরুজ্জামান।
মামলার আসামিরা হলেন ইনাতগঞ্জের মনসুরপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম উল্লার ছেলে আশাহীদ আলী আশা (৪৮), পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের জলফু মিয়া তালুকদারের ছেলে সেলিম মিয়া তালুকদার (৪২), আনমনু গ্রামের দারোগা মিয়ার ছেলে বাদল (২৮), মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে নাবেদ(২৮), রাজাবাদ গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সফিকুল ইসলাম নাহিদ (২৬), রাজনগর গ্রামের মিরাস মিয়া ওরফে সুকুমার দাশের ছেলে আলমগীর (৪২), সিট ফরিদপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে এমএ আহমদ আজাদ (৪৫), নোয়াপাড়া গ্রামের মৃত দলাই মিয়ার ছেলে সাকিব মিয়া (২১), ছোট শাখোয়া গ্রামের মৃত আছির মিয়ার ছেলে মো. রফিক মিয়া (৫২), চরগাঁও গ্রামের মো. মতিউর রহমান
চৌধুরীর ছেলে মো. এমদাদুল চৌধুরী (৩৬), মান্দারকান্দি কসবা এলাকার আবু বক্কর মিয়ার ছেলে মিলন মিয়া (২৯), হাফেজ দুদু মিয়ার ছেলে এমদাদুল হক, কসবা মান্দারকান্দি গ্রামের মো. হানিফার ছেলে আশরাফুল ইসলাম (১৯), নোয়াপাড়ার মরম আলীর ছেলে রবিউল হাসান মিলন (২১), আনমনু গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নাফের ছেলে জহিরুল ইসলাম সোহেল (৪০), মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে রাশেদ (৩৪), ইদ্রিস মিয়ার ছেলে কাজল (৩৫), মৃত এলাইচ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান বাবু (৩২), আব্দুল আওয়ালের ছেলে নয়ন (২৪), তার ভাই জনি (২২), আব্দুল কাদিরের ছেলে জেসন (২৯), মৃত সাবলাল মিয়ার ছেলে ছানু মিয়া (৫২), পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের লোকমান মিয়ার ছেলে এনাম মেম্বার (৫২), পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের চানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (২০), গোলজার মিয়ার ছেলে নুর জামিল (২০),লাল মিয়ার ছেলে বশির মেম্বার (৫০), ফজল কমিশনার (৫২), চরগাঁও গ্রামের শেখ কবির মিয়ার ছেলে শেখ শিপন (৩২), পাঞ্জারাই (হলিমপুর) গ্রামের মৃত নুর মিয়ার ছেলে রাকিব (৩৫), তিমিরপুর গ্রামের মৃত রমিজ উল্লার ছেলে সাবেক কমিশনার মো. আলাউদ্দিন (৫৫), পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের আব্দুর নুরের ছেলে মহসিন মিয়া (৩৫), মৃত নজির মিয়ার ছেলে মো. নুরুজ্জামান (৩০)।
মামলার এজাহার সূত্রে পুলিশ জানায়, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার সাংবাদিক আশাহীদ আলী আশা ও সেলিম আহমদ তালুকদারের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকেই পূর্ব তিমিরপুর, পশ্চিম তিমিরপুর, চরগাঁও এবং আনমনু এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
একপক্ষ পূর্ব তিমিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এবং অপরপক্ষ আনমনু গ্রামে জড়ো হয়। দুপুর গড়াতেই উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং বিকাল ৩টার দিকে নবীগঞ্জ মধ্যবাজার এলাকায় শুরু হয় সংঘর্ষ। উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র, ইট-পাটকেল ও ককটেল নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়,সংঘর্ষ চলাকালে একদল দুষ্কৃতিকারী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাজারের বিভিন্ন দোকানে হামলা, ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।এতে পুড়ে যায় আতিক মিয়ার সবজি দোকান, শিপন মিয়ার জালের দোকান, লিটন মিয়ার মুরগির দোকান ও হাশেমবাগ হোটেল। লুটপাট ও ভাঙচুরের শিকার হয় ইউনাইটেড হাসপাতাল, যেখানে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়। মাছ বাজার থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ লুট হয় এবং আরও ২০-২৫টি দোকান ভাঙচুরের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিকভাবে নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হ্যান্ডমাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়। কেউ আহ্বানে কর্ণপাত না করায় পরে র্যাব ও সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। সংঘর্ষকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে এসআই রিপন চন্দ্র দাস, ওসি সহ আটজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেডে চিকিৎসা দেওয়া হয়। নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও বানিয়াচং ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনায় পরদিন নবীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। বাজারে অবস্থিত ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা দিতে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসআই রিপন চন্দ্র দাস বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-এর ১৫(৩)/২৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে এ একাধিক টিম অভিযানে নেমেছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা চলছে,পুরো পৌর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।